Love Confession: বোনের বিয়েতে জানতে পারলাম তার বর আমারই প্রাক্তন প্রেমিক, ওকে দেখেই আমার চোখে আসলো জল, তার পর…

প্রথম প্রেম কিংবা প্রথম ঘটে যাওয়া ভালোবাসা সারাটা জীবন যেন অক্ষত থেকে যায়। সারা জীবনের স্মৃতির সাথে জরিয়ার থাকে সেই ভালোবাসার মানুষ।

Love Confession: প্রথম প্রেম কিংবা প্রথম ঘটে যাওয়া ভালোবাসা সারাটা জীবন যেন অক্ষত থেকে যায়। সারা জীবনের স্মৃতির সাথে জরিয়ার থাকে সেই ভালোবাসার মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই দিনগুলোর স্মৃতি মলিন হতে শুরু করে ঠিকই, কিন্তু তার কোমল স্পর্শের রেশ আমাদের মনে থেকে যায়। আর পাঁচটা প্রেমের মতো কৈশরে আমার জীবনেও একটি ছেলে এসেছিল, যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলাম। তার হাত ধরেই জীবনের বাকি পথ হাঁটতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা হয়নি। সব স্বপ্ন যেমন পূর্ণতা পায় না ঠিক তেমনই আমাদের পথ হয়েছে আলাদা। কিন্তু তার সঙ্গে যে আবার আমার দেখা হবে, তা ভাবতে পারিনি! আজ সেই কথাই লিখে পাঠালাম, হয়তো আমার এই গল্প আপনার চোখেও জল আনতে সাহায্য করবে…

আমার বোন অর্থাৎ মাসির মেয়ের বিয়ের খবর আসলো –

আমি রিম্পা, বয়স ২৯ বছর। এখনও বিয়ে করিনি তাই একা থাকি ও চাকরি করি। প্রথম প্রেম চলে যাওয়ার পড়ে আর এখনও বিশেষ কাউকে খুঁজে পাইনি। ভালোই ছিলাম। জীবন দিব্যি কাটছিল। একদিন আমার মা ফোন করে বললো মিষ্টি অর্থাৎ আমার ছোট মাসির মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমার ছোট্ট বোনের বিয়ে হবে শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। ওকে বিয়ের সাজে যে কত সুন্দর দেখাবে, তা ভেবেই ভালো লাগছিল আমার। মাস কয়েক আগে থেকেই আমি এই বিয়ের জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলাম। লহেঙ্গা তৈরি করতে দিয়েছিলাম। স্পেশাল ডায়েটও করছিলাম বৈকি। আমার মা তো লহেঙ্গা দেখে মুগ্ধ হয়েছিল, কিন্তু আমাকে মজা করে খোঁটা দিতেও ছাড়েনি। মা প্রশ্ন করেছিল, “তুই কবে বিশেষ মানুষটিকে খুঁজে পাবি?” আমি হেসেছিলাম। ধীরে ধীরে কি আমারো এবার নিজের জীবন নিয়ে ভাবা উচিত সেই চিন্তাতেই মাঝে মধ্যে দুবে যাচ্ছিলাম।

অভিনন্দন জানানোর পালা –

বোনের সঙ্গে আমার ভালোই যোগাযোগ ছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কথা হতো বেশ খানিক। ওর বিয়ের প্রস্তুতি কতদূর, সেই কথাও জানতে চাইতাম। কিন্তু ওর হবু বরের খোঁজ নেওয়া হয়নি কখনও। আসলে বোনের সাজগোজ, শপিং নিয়ে আমরা এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, পাত্রের খোঁজ নেওয়াই হয়নি। এদিকে বিয়ের কয়েক দিন আগেই আমরা সকলে মিলে চলে যাই মাসির বাড়ি। যথারীতি বোনের সঙ্গে দেখা হলো। আনন্দে আমার চোখে জল আসছিলো। ছোট থেকেই আমরা অনেক একসাথে সময় কাটিয়েছি। আর আমাদের বয়সের পার্থক্য খুব একটা নয়। বিয়ের জন্যে ওকে অনেক অভিনন্দনও জানাই। বাড়িতে শুরু হয় বিয়ের উৎসব। আলোয় সেজে ওঠে চারদিক।

হবু পাত্র ও আমার অতীত –

আমরা মাসির বাড়িতে পৌঁছানোর পরেরদিন ছিল দুজনের আশীর্বাদ অনুষ্ঠান। সেই জন্য মাসির বাড়িতে পাত্র ও তার পরিবারকেও নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই সময় বোন ওর হবু বরের সঙ্গে আমাকে আলাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য ডাকে। সে সময় ওকে দেখার পরেই আমার চোখ স্থির হয়ে যায়! খেয়াল করলাম, সেও আমার দিকে একইভাবে তাকিয়ে আছে! আমি যার কথা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম সে আবারো আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমার বোনের হবু স্বামী আর কেউ নয়, সে ছিল আমারই প্রথম ভালোবাসার মানুষ। এরপর সে আলাদা করে কথা বলে আমার সঙ্গে। আমি কেমন আছি জানতে চায়। আমিও তার খোঁজ নিই। দুজনে কথা বলার পরে সিদ্ধান্ত নিই যে, আমার বোনকে আমাদের প্রাক্তন সম্পর্কের বিষয়ে অবশ্যই জানাব।

বোনকে সব কথা জানালাম –

এরপরে একদিন আমরা আলাদা করে বোনের সঙ্গে কথা বলি এবং আমাদের প্রাক্তন সম্পর্কের কথা ওকে জানাই। ও খুব ভালোভাবেই আমাদের কথা শোনে। অভিজ্ঞ মনস্কতার পরিচয় দিয়ে ও এই সত্যিটা গ্রহণ করে। আমাদের জানায় যে, এটা নিয়ে ওর কোনও সমস্যা নেই। কারণ এই সম্পর্কের এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই। আর ওরা দুজনেই দুজনকে খুব ভালোবাসে। আমার বোনের কথাই ঠিক ছিল, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম যে, ওরা একে অপরকে মন থেকে ভালোবেসেছে।

আমি ও আমার একাকিত্ব –

বিয়ের দিন আর আলাদা করে ওর সাথে কথা বলা হয়নি। চোখের জীবনের প্রথম প্রেমকে অন্য একটি মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে দেখলাম। ওদের শুভদৃষ্টি থেকে সিঁদুর দান, সব মুহূর্তের সাক্ষী রইলাম। দুঃখে আমার মন ভার হয়ে গেল। চোখে জল চলে এল। কিন্তু তা লুকিয়ে রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় আমার কাছে ছিল না কারণ ও আমার নিজের বোন। ওর খুশি দেখলে মনে হচ্ছে নিজেরই যেন বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের পরে আমি আমার প্রাক্তন প্রেমিককে ডেকে অভিনন্দও জানালাম। সেও হাসি মুখে আমাকে বিদায় জানাল।

অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করে যে, ২৬ বছর বয়সেও আমি কেন সিঙ্গেল? কিন্তু আমি কোনওদিন কাউকে বলতেই পারি না যে, প্রথম প্রেমকে আজও ভুলতে পারিনি। সম্পর্কের ভার এখনও মনে মনে বয়ে বেড়াচ্ছি…কিন্তু ওরা ভালো থাক, আজ এইটুকুই প্রার্থনা করি। সব ভালোবাসা পূর্ণতা না পেলেও যেন সকল ভালোবাসা